ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ First Caliph of Islam Hazrat Abu Bakr (RA) Brief Biography

আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সংক্ষিপ্ত জীবনী

আবু বক্কর (রাঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী


আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার পরিচয়ঃ

রসূলুল্লাহ (সঃ) নবুয়তের পরে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন আবু বক্কর (রাঃ)। তাঁর নাম আব্দুল্লাহ কারও মতে আতিক যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হয়েছে। আবু বক্কর ছিল হালকা পাতলা গড়নের, তিনি ব্যবসা করতেন,প্রচুর ধন সম্পদের মালিক ছিলেন। জাহিলিয়ার সময়ে তিনি কুরাইশদের একজন নেতা ছিলেন। পরামর্শ দাতা ও বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন বিশেষ করে নসব বা বংশসংক্রান্ত জ্ঞানে তিনি পারদর্শী। তিনি আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতেন,অত্যন্ত সৎ,অভাবীদের সহায়তাকারী,অতিথি পরায়ণ,কোমন মন ও বিপদে সাহায্যকারী। তিনি সালাত ও কোরআন তিলাওয়াতের সময় কাঁদতেন তা দেখে মুশরিকদের মহিলা ও শিশুরা তাতে আকৃষ্ট হতো।

আবু বক্কর এর তিন কন্যা ও দুই পুত্র ছিল। ছোট মেয়ে আয়েশাকে বাল্যকালেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে বিবাহ দিয়ে ছিলেন।

আবু বক্কর কখনও মুর্তিপূজা করেননি সত্যের প্রতি তাঁর অন্তর আগে থেকেই স্থির ছিল। ইসলামে আসার পর তিনি সবকিছুর উপর তা পছন্দ করলেন এবং সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করলেন। জান্নাতে সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবীর মধ্যে পাঁচ জনই ছিল আবু বক্কর (রাঃ) আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

দানশীলতা

ইসলামের জন্য তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। তাবুকের যুদ্ধে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ দান করেছিলেন রসূলুল্লা (সঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন ”তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ” তিনি উত্তর  দিয়েছিলেন ”তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলই যথেষ্ট” কুরাইশদের যেসব দাসদাসী ইসলাম গ্রহণের কারণে নির্যাতন হচ্ছিল তাদের তিনি তাঁর অর্থের দ্বারা মুক্ত করে দিতেন এদের মধ্যে একজন হল বিল্লাল (রাঃ)। বিল্লাল (রাঃ) ইসলামের প্রথম মুয়াযযিন ছিল। মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন আবু বক্কর (রাঃ) সম্পদ আমার উপকারে যেমন এসেছে তা অন্য কারো সম্পদ তেমন কাজে আসেনি। আবু বক্কর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী।

বীরত্ব

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,শ্রেষ্ঠ বীর হচ্ছেন আবু বক্কর (রাঃ)। বদরের যুদ্ধে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে ছিলেন,উম্মুক্ত তলোয়ার নিয়ে তাঁকে পাহারা দিয়েছেন সে সময় কাফিরদের বাহিনী ছিল মুললিমদের চেয়ে তিনগুন। আবু বক্কর (রাঃ) ছেলে আবদুর রহমান ছিল কুরাইশদের পক্ষের যোদ্ধা তিনি দূরে দূরে থাকতেন যেন পিতার সাথে না দেখা হয় বা সামনে না পড়েন। আবু বক্কর (রাঃ) শুনে বলে ছিলেন ”আমি তো তোমাকেই খুজছিলাম, সামনে পেলেই হত্যা করতাম” তিনি এটাই বুঝিয়েছেন এক জন মুমিনের কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা সকল মানবিক স্নেহের উপরে।

জ্ঞান

সাহাবাদের মধ্যে কুরআনের সবচেয়ে বেশী জ্ঞান ছিল আবু বক্কর (রাঃ)। বিভিন্ন ঘনটায় আমরা এর প্রমাণ পাই যার একটি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর মৃত্যুর পর বিভিন্ন গোত্রের লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করার ঘটনায় সে সময় তিনি বলেছিলেন ”আল্লাহর কসম, যে সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে,আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো, যদি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সময় দিত এমন একটি উটের গলার রশিও দিতে অস্বীকার করে” রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,আমি যদি কাউকে আল্লাহ ছাড়া বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম,তাহলে সে হত আবু বক্কর (রাঃ)। তিনি স্বপ্নের ব্যাথ্যা দেওয়ার বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তাঁর খুতবা ছিল সারগর্ভ,ভাষাশৈলী চমৎকার। মানুষকে কিভাবে তার বুদ্ধির স্তর অনুযায়ী আল্লাহর দিকে ডাকতে হবে সুন্দরভাবে,তাঁর কাছে সে শিক্ষা আমরা পেতে পারি। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সকল সাহাবা মনক্ষুন্ন ছিলেন আবু বক্কর ছাড়া। আল্লাহ ও তাঁর রসূল এর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও নির্ভরা থেকে যেটা এসেছে। পরবর্তীতে আল্লাহ সূরা ফাতাহ এ জানিয়েছিলেন যে, তা ছিল এক সুস্পষ্ট বিজয় এবং সকলেই পরে তা বুঝতে পেরেছিলেন। নবীরা যেখানে মারা যায় সেখানেই তাদের কবর দেওয়া হয় একথা আবু বক্কর (রাঃ) জানিয়েছেন এবং এভাবে কোথায় নবী রসূলুল্লাহ (সঃ) এর কবর হবে সে বিতর্কের অবসান করেছেন।

”সিদ্দিক” বিশ্বাসী

মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর হুকুমে মিরাজ এ গিয়েছিলেন পরদিন সকালে ঘটনাটি অনেকেই দ্বিধা-দন্দ দেখা দিল,অনেক মুসলিমই অবিশ্বাস করে কাফির হয়ে গেল। লোকেরা আবু বক্কর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলঃ তুমি কি শুনেছ তোমার বন্ধু কি বলেছে? সে বলেছে যে সে গতরাতে কাবা থেকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে গিয়েছে,সালাত আদায় করেছে,তারপর মক্কায় ফিরে এসেছে। আবু বক্কর বললেন রসূলুল্লাহ (সঃ) এ কথা বলে থাকেন ”তাহলে সে নিশ্চয়ই সত্য বলেছেন।” আমি তো এর চেয়ে আশ্চর্যরি বিষয় বিশ্বাস করে থাকি  তাঁর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে থেকে ওহী আসে। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাছে যেয়ে সম্পূর্ণ ব্যাপারটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং জানতে পারলেন এবং বললেন আপনি সত্য বলেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাকে ”সিদ্দিক” উপাধী দিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে সেই কঠিন রাস্তায় হিজরত করেছে। আবু বক্কর (রাঃ) সালাতের ইমামতি করেছেন রসূলুল্লাহ (সঃ) এর আদেশে।

 খিলাফত

রাসূলুল্লাহ (সঃ) মৃত্যুর পর তাঁর দাফন শেষ হওয়ার আগেই পরবর্তী খলিফা নির্বাচন নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে মদিনার আনসাররা সাকীফা বনু সংখ্যাক মুহাজিরও ছিলেন। আনসাররা অভিমত দিলেন যে পরবর্তী খলিফা তাঁদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হোক। মুহাজিররা এর প্রতিবাদ জানালেন।দুই পক্ষ থেকে দুইজন খলিফা নির্বাচনের দাবীও কেউ কেউ জানালেন। এভাবে একটি গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। খবর পেয়ে আবু বক্কর (রাঃ) একটি চমৎকার ভাষণ দিলেন। তাঁর ধীরতা ও যুক্তি-প্রমাণের কাছে সবাই নতি স্বীকার করল। ওমর (রাঃ) খলিফা হিসাবে আবু বক্করের (রাঃ) এর নাম প্রস্তাব করলেন ও প্রথমেই তাঁর হাতে বাইয়াত নিলেন এর পর সকলেই বাইয়াত নিয়েছিলেন এবং খলিফা নির্বাচিত হলেন আবু বক্কর (রাঃ)।

খিলাফত জীবনের কর্মকান্ড

·        ইমাম হিসাবে তাঁর দায়িত্ব ছিল সকলকে দেখাশুনা করা,খুতবায় বিভিন্ন শিক্ষা দেওয়া,সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।

·      সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো,নিয়োগ,জিহাদের বিভিন্ন আর্থিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা,শত্রুদের সাথে বিভিন্ন সন্ধি ইত্যাদি।

·        হুদুদ প্রতিষ্ঠা করা ইজতিহাদ করা।

·        মসজিদে সকল ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।

·    রসূলুল্লাহ (সঃ) মৃত্যুর সাথে সাথে কিছুসংখ্যাক লোক মুর্তিপূজায় ফিরে গেল কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করল বা  মুরতাদ হয়ে গেল অর্থাৎ তারা যারা কথা ও কাজের মাধ্যমে ইসলামকে পরিত্যাগ করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।

কুরআন লিপিবদ্ধকরণ

ইয়ামামার যুদ্ধে যখন অনেক কুরআনের হাফেজ শহীদ হলেন উমর তখন আবু বক্কর (রাঃ) কে কুরআন পুস্তক আকারে লিপিবদ্ধ করার অনুরোধ করেন। তখন চামড়ায়,পাথরে,কাগজে বিক্ষিপ্ত আকারে লিপিবদ্ধ করা হল পরে কুরআন কে মাসহাফ আকারে লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তিনি খলিফা হওয়ার পর দুই বছর পযন্ত দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ফলে মারাগিয়ে ছিলেন।

লেখাটি পাড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নিজে জানুন এবং অপরের কাছে  লিঙ্ক শেয়ার করুন।

 

 

Next Post Previous Post