গ্যাষ্ট্রিক এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ (Homeopathic Treatment of Gastric)

 

gastric homeopathy images
gastric images

গ্যাস্ট্রিক কি বা কেন হয়?

”সময় এবং স্রোত কখনও কারও জন্য থেমে থাকেনা” আসলে উক্তিটি দেওয়া এই কারণে মানুষ সময় মত খাওয়া দাওয়া করেনা যার ফলে পেটের নানা ধরনের অসুক হয়ে থাকে। অনিয়মিত বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত,চর্বিযুক্ত,বাসি পচাঁ খাবার,খাদ্য ভালভাবে সেদ্ধ্যে না হওয়া, দূষিত পানি পান করার ফলে পেটের অসুখ বেশী হয়ে থাকে। এছাড়া চা,কফি,মদ্য পান,ধুমপান,গুরুপাক দ্রব্যাদি খাওয়ার ফলেও বদ হজম বা গ্যাস হয়ে থাকে।

গ্যাস্টিক এর লক্ষণ কি?

গ্যাস্টিকের ফলে ক্ষুধা বেশী হয়,আবার ক্ষুধা কমে যায়,বুক জ্বালা-পোড়া করে,টক ঢেকুর ওঠা,পেট বেদনা হয়,বুক ধড়পড় করে ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

গ্যাস্ট্রিক হলে করনীয় কি?

নিয়মিত সময়মত খাবার খেতে হবে। বেশী বেশী পানি পান করতে হবে। খাবার ভাল ভাবে চর্বন করে খেতে হবে। সকাল সন্ধা সাধ্য মত ব্যায়াম করতে হবে। জীবিত মাছ,কাঁচা কলা,কাচাঁ পেপে,গাজর,লাউ ইত্যাদি ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেতে হবে।

গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায়  হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ

গ্যাষ্ট্রিকের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অত্যন্ত কার্যকারী লক্ষণ মিলিয়ে নিয়মিত কিছু দিন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করলে গ্যাস্ট্রিক আরোগ্য হয়। নিম্নে কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ লক্ষণভিত্তিক আলোচনা করা হলঃ

নাক্স ভুমিকা : হিংসুটে স্বভাব ভিষণ রাগী,কলহপ্রিয়,শীতকাতর,নেশাখোর,অধিক মশলাযুক্ত খাবার, রাত্রি জাগরণ ইত্যাদি। খাদ্য ভালভাবে হজম হয় না পেট ব্যাথা মুখে টক ঢেকুর ওঠে। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে সেব্য।

কার্বভেজ : কোন প্রকার কঠিন অসুখের পরে খোলা বাতাস চায়,অন্ধকারে ভয় পায়, স্মৃতি শক্তি কম,শীতকাতর,এই ধাতুর রোগীদের ক্ষেত্রে বেশী উপকারি। খাদ্য হজম হয়না নিচের পেট ফাপে দূর্গন্ধ বায়ু বাতাস,ঢেকুর ওঠলে ভাল লাগে। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে সেব্য। ১ এম ১৫ দিন অন্তর অন্তর ১ ডোজ।

লাইকোপডিয়াম : অতিশয় কৃপন, ভিরু,একা থাকতে ভয়,রাগী,নতুন লোকের আগমনে ভয়, মনের আনন্দে কাদে,গরম খাবার পছন্দ,গরমে কাতর,অজির্ণ পীড়ায় খুব ক্ষুধা হয়,সামান্য আহারে পেট ভরিয়া যায়,কোষ্টবদ্ধ মাঝেমাঝে তরল মল,পেট ফাপে,টক ঢেকুর,ভুটভাট করে। বিকাল ৪টা বা রাত্র ৮ টায় রোগের বৃদ্ধি হয়। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে সেব্য। ১ এম ১৫ দিন অন্তর অন্তর ১ ডোজ।

নেট্রামকার্ব : গোলমাল,গান বাজনা মোটেও পছন্দ করে না। দুধ খাইলে উদরাময়,সর্বদা পেট ভারবোধ,পেটে বায়ু জমে,ফুলিয়া ওঠে,কোষ্টবদ্ধ মাঝেমাঝে তরল মল,শাক স্বজি¦ পানা হারে রোগের বৃদ্ধি। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে সেব্য। ১ এম বা ১০ এম ১৫ দিন অন্তর অন্তর ১ ডোজ।

ইপিকাক : ঘৃত পক্ক পোলাও,মাংস,অধিক মিষ্টি,গুরুপাক আহার করিয়া পেট ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, বমি বা বমিবমি ভাব। শক্তি ৩ এক্স বা ৩০ দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর ২ ফোটা সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

পালসেটিলা : শান্ত স্বভাব কোমল মন,অভিমানি, অল্প কথায় মনে ব্যাথা,গরম কাতুরে,মুক্ত বাতাস পছন্দ করে। ঘৃত পক্ক পোলাও,মাংস,অধিক মিষ্টি ইত্যাদিতে বৃদ্ধি। শক্তি ৩ এক্স ২ ঘন্টা অন্তর অন্তর ২ ফোটা করে সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

ম্যাগ্নেসিয়া কার্ব : খিট খিটে স্বভাব,বদ মেজাজী,শীতকাতর,মাংস খাবার খুব ইচ্ছা, দুধ পান অসহ্য, পেট ফাঁপে,বুক জ্বলে, টক ঢেকুর ওঠে,আলু, দুধ খাইলে পেটে বায়ু জমে,শুল ব্যাথা হয়। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ।

চায়না : সমস্ত পেট ফাাঁপা,পাতলা পায়খানার সাথে অজির্ণ,ফল খাইলে বাড়ে,রোগী দিন দিন দূর্বল হতে হাকে,খাদ্য দ্রব্য ভাল ভাবে হজম হয় না। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ।

ক্যারিকা পেঁপেয়া : যাহাদের হজম শক্তি দূর্বল, মাংস, ডিম, গুরুপাক, দুধ হজম হয় না, অল্প অল্প করিয়া পায়খানা হয়,তরল মল,চোখ হলদে জিহ্বাহ হলুদ ময়লা,রক্ত স্বল্প পেট ফোলা।

শক্তি মাদার কিছু অধিক ‍দিন ৪ ফোটা করে সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ৩ বার থেতে হবে।

সালফার : খিট খিটে স্বভাব, অল্পতে উত্তেজিত, অত্যান্ত স্বার্থপর,গরমে কাতর,অপরিস্কার প্রায় চুলকানিতে ভোগে,পায়ের তলায় জ্বালা শরীর দূর্গন্ধ ঘাম, রুটি, আলু, ঘৃত প্রভৃতি দ্রব্য আহার করিলেই পেট ফাাঁপে টক ঢেকুর ওঠে,দূর্গন্ধ পায়খানা নতুন বা পুরাতন অজির্ণ পীড়ায় ভোগে। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ। পুরাতন হলে ১ এম বা ১০ এম সাকাল বিকাল ২ মাত্রা।

আর্সেনিক অ্যালবাম : নোংরা স্বাধ, গরম জ্বালা অনুভুতি, টক তীব্র গন্ধ তীতা ঢেকুর, নাড়ী দ্রুত, হাত-পা কাপে ঠান্ডা হয়ে যায়। শক্তি ৩০ দিনে ৩ মাত্রা সামন্য ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে। পুরাতন হলে ২০০ দিনে ২ মাত্রা সামান্য পানিসহ।

স্ট্রাফিসাগ্রিয়া : ধুমপান করে যদি কারও বুক জ্বালা পোড়া করে তাহলে স্ট্রাফিসাগ্রিয়া ভাল কাজ করে। শক্তি ৩০ সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে ৩ ঘন্টা অন্তর অন্তর সেব্য।

বাইওকেমিক চিকিৎসাঃ

নেট্রাম ফস : টক ঢেকুর,বুক জ্বালা,মুখে টক ঢেকুর উঠে,হরিদা বর্ণের জ্বিহবা,আহারের পরে পেট বেদনা,অম্ল গন্ধযুক্ত মল,মাঝেমাঝে অম্ল যুক্ত বমি ইত্যদি লক্ষনে কার্যকর। লক্ষণ মিলিয়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের সাথে শক্তি ৬ এক্স বা ১২ এক্স ৪ বড়ি করে দিনে ৩ বার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে চুষে খাবে।

নেট্রাম মিউর : অত্যাধিক লবন প্রিয়, তিক্ত ঝাল খাইবার প্রবল ইচ্ছা, রুটি খাইতে অনিচ্ছা, রুটি খাইলে অর্জিন পীড়া বাড়ে,মুখে জল ওঠে,মাথা ধরে,অতিশয় জল পিপাসা ইত্যাদি লক্ষণে মহা উপকারি ঔষধ। লক্ষণ মিলিয়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের সাথে শক্তি ৬ এক্স বা ১২ এক্স ৪ বড়ি করে দিনে ৩ বার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে চুষে খাবে।

ক্যালকেরিয়া ফস : রক্তহীন, দূর্বল,রোগীদের হজম শক্তির দর্বলতা, আহারে অনিচ্ছা, উদরে বায়ু জমে ইত্যাদি। শক্তি ৩ এক্স বা ৬ এক্স ৩ ঘন্টা অন্তর অন্তর সেব্য।

ক্যালি মিউর : ঘৃতপক্ক বা অধিক তৈলাক্ত খাদ্য আহার জনিত অর্জিন পীড়ায়,জিহ্বায় সাধা রঙ্গের প্রলেপ। শক্তি ৩ এক্স ৩ ঘন্টা অন্তর অন্তর সেব্য।

বিঃদ্রঃ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক নয় এতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সচেতনতার সাথে ব্যবহার করুন।


লেখাটি পাড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নিজে শিখুন এবং কাছের লোকদের লিঙ্ক শেয়ার করুন।


Next Post Previous Post