Brief biography of Hazrat Umar (RA): হযরত উমর রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

Brief biography of Hazrat Umar (RA)
Brief biography of Hazrat Umar (RA)

ভূমিকাঃ

ইসলামের চরম শত্রু উমর ইবনুল খাত্তাব রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর উদ্দেশ্যে কা’বায় গেলেন তার সামনেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূরা হাজ্জ তিলাওয়াত করছিলেন উমর ছিলেন তাঁর পিছনেই কুরআনের অপূর্ব ভাষা ও অলৌকিকতায় তাঁকে আকৃষ্ট করল। তিনি মনে মনে ভাবলেন,কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে কবি বলেছে তা ঠিকই বলেছেন। তখন তিনি ভাবলেন কবি না নিশ্চই জাদুকর রাসূলুল্লাহ (সঃ) পাঠ করলেন “এটা কোন জাদুকর বা গণকের কথাও না,এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।” এমন বাণী শুনে উমরের অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে যায় এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) উমর এর জন্য দোয়া করলেন তারপর উমার ইসলাম গ্রহণ করেন। উমরের ইসলাম গ্রহণ তখনকার সময় মুসলিমদের সাহস ও উৎসাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আল-ফারুক উপাধি অর্জনঃ

দুই সারিবেধে মুসলিমরা কা’বায় প্রবেশ করল একটির নেতৃত্ব ছিলেন উমর (রাঃ) এবং অপরটির নেতৃত্বে হামযা (রাঃ) কুরাইশরা যখন তাদের দেখল,তাদের চোখে-মুখে চরম বিষন্নতা ও হতাশার ছাপ ফুটে উঠল যা আগে কখনো দেখা যায় নি। সেদিন আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে ”আল-ফারুক” উপাধি দিলেন কারণ সেদিন ইসলাম প্রকাশ্যে আত্নপ্রকাশ করেছিল এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল।

উমর (রাঃ) জীবন যাপন

ইসলামের দ্বিত্বীয় খলিফা হওয়ার পরে তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করা হল “আল্লাহর মাল থেকে কতটুকু পরিমান গ্রহণ করা নিজের জন্য বৈধ মনে করেন? তিনি উত্তরে বললেন,”শীত ও গ্রীষ্মের জন্য দুই খান কাপড়,হজ্জ-ওমরার জন্য সওয়ারীর জন্তু এবং কুরাইশের কোন মাঝারি পরিবারের সমমানের খাদ্য আমার ও পরিবারের জন্য। এরপরে আমি সাধারণ মুসলিমের মতই একজন মুসলিম। তারা যা পাবে আমিও তাই পাব।” একবার উমর (রাঃ) অসুস্থ হয়েছিলে তখন চিকিৎসক তাকে মধু ব্যবহার করতে বললেন,মিম্বরের আহোরণ করে মুসলিমদের বললেন, ”তোমরা অনুমতি দিলে মধু ব্যবহার করতে পারি,তা না হলে এটা আমার জন্য হারাম।”তৎক্ষণাৎ উপস্থিত সবাই অনুমতি দিয়ে দিল। উমর (রাঃ) এমন সাধারণ জীবন যাপন করতেন। এক বার উমার (রাঃ) এর মেয়ে হাফসা মুসলিমদের পক্ষে কথা বললে তিনি জবাব দিলেন ”হাফসা তুমি তোমার জাতির পক্ষপাতিত্ব রকছো আর নিজের পিতার সাথে অহিতাকাংখী আচরণ করছ।আমার পরিবারের লোকদের আমার জানে ও মালে অধিকার রয়েছে, কিন্তু আমার ধর্ম ও আমানতদারীতে কোন অধিকার নেই”।

উমর (রাঃ) এর সময়ে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন তিনি শপথ করেন যে যতদিন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসবে,ততদিন তিনি ঘি ও গোশত স্পর্শ করবেন না। তিনি এই প্রতিজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। এবং তিনি বলেছিলেন,”জনগনের যে দূরবস্থা হয়,তা যদি আমারও না হয়,তাহলে তাদের সমস্যার গুরুত্ব আমি বুঝবো কি ভাবে।”

তিনি একবার এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ঘোড়া কিনতে চেয়ে দরদাম করে ঘোড়া নিয়ে ছোটোছুটি করতে গেলে ঘোড়া হোচট খেয়ে পড়ে গেলে ঘোড়া আহত হয় তখন তিনি ঘোড়া ফেরত দিতে গেলে নিতে চাই না যার ফলে মামলা নিয়ে কাজী শুরাইহের আদালতে হাজির হলেন তখন কাজী বিচারে বললেন ”আমিরুল মুমিনীন আপনি যে জিনিস কিনেছেন তা নিয়ে নিন অথবা যে অবস্থায় ওটা নিয়েছিলেন সে অবস্থায় ফেরত দিন”। উমর (রাঃ) বলেছিনলেন “একেই বলে ন্যায়বিচার”। এরপর তিনি শুরাইহকে কুফার বিচারপতি নিযুক্ত করেছিলেন।

হিজরত

অন্যদের মত উমর (রাঃ) চুপি চুপি হিজরত করেননি। মক্কা থেকে মদীনায় যাত্রার পূর্বে তিনি প্রথমে কা’বা তাওয়াফ করলেন তারপর সমবেত কুরাইশদের সামনে গিয়ে ঘোষণা করলেনঃ- আমি মদীনায় যাচ্ছি। কেউ যদি তার মাকে পুত্রশোক দিতে চায় সে যেন এই উপত্যকার অপর প্রান্তে আমার সাথে দেখা করে তারপর তিনি মদীনার পথে যাত্রা শুরু করলেন একা একা প্রকাশ্যে। কিন্তু কেউ তাকে বাঁধা দেওয়ার দুঃসাহস করলো না।

তাঁর দায়িত্বশীলতা

এক শীতের রাতে উমর (রাঃ) তার নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন তখন তার কানে বাচ্চার কান্নার শব্দ আসল এবং সেখানে যেয়ে দেখে একজন বিধবা তার কয়েকটি বাচ্চা নিয়ে কাদছে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে মহিল্যাটি বলল আমার ছেলে মেয়েরা ক্ষুদার জ্বালায় কাদছে আর চুলায় হাড়িতে কিছু নুড়ি পাথর দিয়ে জ্বাল দিচ্ছি যেন তারা খাবার খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়ে। তখন এই কথা শুনে উমর (রাঃ) দৌড়ে গেল বাইতুল মালে সেখান থেকে নিজে আটা ও তেল এনে রান্না করে বাচ্চাদের নিজে খাওয়ায়ে তারপর বাইতুল মাল থেকে মহিল্যার জন্য প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী খাবার নিয়ে আসে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে জনগনের সুযোগ-সুবিধার সব কিছু নিজে দায়িত্বের সাথে খোজ খবর নিয়ে বেড়াত। কোথাও কোন কেহ কোন সমস্যার মধ্যে আছে খুজে বের করে তার সমাধান করতেন।

একজন ক্রীতদাস উচ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে খলিফা দেখল লোকটির শরীরে হাড্ডি ছাড়া কিছুই নেই তিনি বুঝলেন সে ক্ষুদার তাড়ানায় লোকটি  চুরি করেছে তাই তাকে শাস্তি দেওয়ার বদলে তার মালিকের চুরি যাওয়া উটের ক্ষতিপুরণ দেওয়ার আদেশ দিলেন।আর ক্রীতদাসকে সতর্ক করে দিলেন যে তারা যেন আর কখনও চুরি না করে।

সাম্য

একবার উমর (রাঃ) ছেলের বিরুদ্ধে জনৈক মিশরীয় লোককে প্রহার করার অভিযোগ আনা হল উমর (রাঃ) তখন মিশরীয় লোকটিকে বললেন চাবুক দিয়ে আমার ছেলেকে প্রহার করে প্রতিশোধ নিতে। তখন উমর (রাঃ) ছেলে ছিল গভর্ণর।

মুসলিমরা একবার গণিমতের মাল হিসাবে কিছু ইয়ামানী কাপড় পেয়েছিলেন। সকলকে এক টুকর করে কাপড় বন্টন করে দেওয়া হল। উমর (রাঃ) সেই কাপড় দিয়ে জামা তৈরী করল তিনি যেহেতু অনেক লম্বা ছিলেন অতটুকু কাপড় দিয়ে তার জামা হওয়ার কথা নয়। মেম্বরে খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি উঠে দাড়িয়ে বলল এক টুকর কাপড় দিয়ে আপনার জামা বানানো সম্ভাব না উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আপনার খতবা শুনবো না। তখন পুত্র আব্দুল্লাহ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন যে তিনি তার ভাগের কাপড় পিতাকে দিয়ে দিয়েছেন জামা বানানোর জন্য তখন লোকটি মেনে নিল।

খলিফা হওয়ার পর ভাষণ দিতে গিয়ে উমর (রাঃ) বললেন যদি তোমরা আমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখ তবে আমাকে সোজা করে দিও। সমবেত মুসলিমদের মধ্যে একজন বলে উঠলঃ তোমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখলে তীক্ষ্ণধার তরবারী দিয়ে সোজা করে দেব। উমর (রাঃ) শুনে খশি হয়ে বললেন আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া আমি আমার খিলাফতের মধ্যে এমনতর ব্যাক্তিও সৃষ্টি করতে পেরেছি যে আমাকে তীক্ষ্ণ তরবারী দিয়ে সোজা করতে পারে।

এছাড়া তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল গরীব দূখীদের,আত্নীয়-স্বজনদের,অভাবীদের,দুর্বল অক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে তার সম্পদ ওয়াকফ করেছিলেন। তার সুচারু ও বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারনে জেরুজালেমের বিজয় এনে দিয়েছিল। তিনি ছিলেন প্যরস্য রাজ্যর শক্তিশালী সাম্রাজ্য অন্য দিকে বিনয়ী এবং প্রজাবৎসল মানুষ। রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন উমরের সাহস দেখে শয়তান উমরকে ভয় পায়। কখনও কখনও লোকেরা ভিন্ন মত পোষন করত কিন্তু উমর (রাঃ) এক ঘেয়েমি করত কিন্তু পরে দেখা যেত উররের কথা কুরআনের সাথে মিলে যাচ্ছে। তিনি মাকামে ইব্রাহিম সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করেণ,হিজাব গ্রহণ করেণ,বদরের যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করা ইত্যাদি।

ইনসাফ

উমর (রাঃ) এক অন্ধ বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখে তাকে জিম্মি করে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার বংশ কি তিনি বললেন আমি ইয়াহুদী। তার কাছে ভিক্ষা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন আমি বৃদ্ধ কোন কাজ করতে পারিনা। নিজের খরচ সহ আমাকে জিজিয়া কর দিতে হয় তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে হয়। উমর (রাঃ) বায়তুল মালে নিয়ে যেয়ে তার সব জিজিয়া কর মাফ করলেন ও বললেন তিনি যৌবন বয়সে জিজিয়া কর দিয়েছেন এখন বৃদ্ধা বয়সে তাকে আমরা কষ্ট দিচ্ছি। এরপর খলিফা  বৃদ্ধ যিম্মিদের উপর থেকে জিজিয়া কর মাফ করার ব্যবস্থা করে দেন।

একবার রোমের সম্রাট উমর (রাঃ) কাছে এক জন দূত পাঠালেন তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে তিনি মদীনায় এসে উমর (রাঃ) কে পেলেন না লোকজনকে জিজ্ঞাসা করল ”তোমাদের বাদশা কোথায়” লোকেরা বলল মদীনার বাহিরে কোথাও গেছে দূত মদীনার বাইরে খুজতে খুজতে তাকে পেল এক গাছের নিচে মরুভূমিতে বালুর উপর মাথার নিচে হাতের ছোট লাঠি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি আশ্চর্য হলেন উমর (রাঃ) এমন এক ব্যক্তি যার ভয়ে সমস্ত রাজা বাদশাহরা ভয়ে কাপতে থাকে আথচ তিনি নির্ভাবনায় একাকি ঘুমিয়ে আছেন। তিনি ইনসাফ প্রতিষ্ঠীত করেছেন তাই স্বস্তিতে ঘুমাচ্ছেন। আর আমাদের রাজা বাদশাহরা অত্যচার-অবিচারে লিপ্ত যার ফলে সব সময় তারা ভয়ে ভয়ে দিনযাপন করে থাকে।

উমর (রাঃ) মৃত্যু

ফজরের সালাতের ইমামতি করার সময় মুগীরা ইবনু শু’বাব পারসিক দাস আবু ফিরোয তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আব্দুর রহমান ইবনু আউফ অবশিষ্ট সালাত দ্রুত শেষ করেন। যেটুকু সময় তিনি বেঁচে ছিলেন,ছয়জন সাহাবীকে পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের দ্বায়িত্ব দিয়ে যান। তাঁরা উসমান (রাঃ) কে পরবর্তী খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করেন।


লেখাটি পাড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নিজে জানুন এবং অপরের কাছে  লিঙ্ক শেয়ার করুন।


Next Post Previous Post