অর্জুন গাছের উপকারিতা ও অপকারিতাঃ (Advantages and Disadvantages of Arjuna Tree:)
আমাদের
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অর্জুন গাছকে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ
ওষধি গাছ হিসেবে ধরা হয়েছে। অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করে আমরা বহু রোগ থেকে উপশম পেতে
পারি। আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব অর্জুন গাছ এর দ্বারা কী কী রোগ থেকে ভালো থাকতে পারি।
অর্জুন গাছের বাকলে আছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এ ছাড়াও এতে আছে গ্লূকোসাইড। এর
পাশাপাশি ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অর্জুন গাছের ছালে খনিজ উপাদান
রয়েছে যা আমাদের দেহের অনেক সমস্যার থেকে মুক্তি দেবে।
অর্জুন গাছের ছাল,পাতা এবং ফল ভেষজ ওষুধ হিসাবে
ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত হয়ে আসসে সেই প্রাচীনকাল থেকে। এর ছাল থেকে সংগৃহীত ট্যানিন
চামড়াতে ব্যবহৃত হয়। এই উপাদান টানিন মুখ,জিহ্বা এবং মাড়ির ব্যাথার চিকিৎসাতে ব্যবহার করা হয়ে
থাকে। এটি মাড়ির থেকে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করতে সাহায্য করে। শরীরে যেকোন ক্ষত,
খোস-পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুন গাছের ছাল বেঁটে লাগালে দ্রুত সেরে যায়। অর্জুনের ছাল
থেকে হৃদরোগের ওষুধ তৈরী করা হয়,পাতার রসে আমাশয় রোগ নিরাময় করে থাকে।
অর্জুন গাছের উপকারিতাঃ
অর্জুন
গাছ নানা ভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে যেমন,ছাল,পাতা,ফল ও গাছের রস বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত
করণের মাধ্যেমে আমরা ব্যবহার করে থাকি। নিম্নে অর্জুন গাছের উপকারিতা সম্পর্কে
আলোচনা করা হলঃ
১।
হার্টের যে কোন ধরনের সমস্যায় সর্ব প্রথম অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে বাজারে অর্জুন গাছ থেকে তৈরী অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। অর্জুন গাছের
ছাল ভালভাবে গুড়া করে চিনি ও গরুর দুধের সঙ্গে প্রত্যহ সকালে খেলে হার্টের অসুখ
এবং বুক ধড়ফড় করা কমে যায়।
২। অ্যাজমার রোগের ক্ষেত্রে অর্জুন গাছের
ছাল অসাধারণ উপকার করে থাকে। অর্জুন গাছের ছাল গুড়া করে দুধের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত
খেতে পারেন তাহলে অ্যাজমার সমস্যা অনেক কমে যাবে।
৩। আমরা জানি আমাদের ত্বকের জন্য এই অর্জুন
গাছের ছাল কত বেশী উপকারী। এটি দেহের ভিতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে
ও ত্বকের কোষ মজবুত করে। অর্জুন গাছের ছাল গুড়া করে মধুর সাথে মিশিয়ে ব্রণের উপর
ব্যবহার করলে ব্রণ দ্রুত সেরে যা।
৪। আমাশয় একটি খুবই কষ্টদায়ক পীড়া। পেটর
মধ্যে সর্বদা ডাকতে থাকে ব্যথা করে বিষেশ করে নাভীর কাছে বেশী ব্যথা অনুভব হয়।
খাবার খাওয়া যায়না ঘনঘন পায়খানার বেগ হয় কিন্তু মল পরিস্কার হয়না। এই যন্ত্রণা
থেকে মুক্তি পেতে অর্জুন গাছ ব্যপক ভূমিকা পালন করে থাকে। গাছর ছালের থেত করে
দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করতে হবে।
৫।
আমাদের দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। অনেক সময় দাঁতের মাড়ি ফুলে
লাল হয়ে যায় ও খুব ব্যথা করে এমনকি রক্ত পড়ে। অর্জুন গাছের ছালের গুড়া করে মাজন
তৈরী করে নিয়মিত কিছু দিন ব্যবহার করলে দাঁতের মাড়ির সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।
৬। বিরক্তিকর কাশিতে অর্জুন গাছের ছাল বাসক
পাতার রসে ভিজিয়ে তারপর শুকিয়ে গুড়া করে মধু দিয়ে মিশিয়ে খেলে অতি সহজেই কাশি
উপশোম হয়ে থাকে।
৭। যুবতী মেয়েদের যখন অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়
যার ফলে পেটে ব্যথা ও বমি বা বমি বমি ভাব হয়। সাদা বা রক্ত স্রাব হলেও অর্জুন
ব্যপক কাজ করে থাকে। এই ব্যথার জন্য অর্জুন গাছের ছাল গুড়া করে সামান্য কুসুম গরম
পানিতে মিশিয়ে কিছু দিন খেলে ব্যথা উপশোম হয়।
৮। আমাদের অনেক সময় খোস পাঁচড়া হয়ে থাকে
থাকে এটা অধিক বিরক্তিকর। আর কিছুতেই এগুলি সারতে চায় না। তখন অর্জুন গাছের ছাল
ব্যবহার করলে উপকার হয়। গাছের ছালের থেতলে তার প্যাক তৈরী করে পাঁচড়ার স্থান ভাল
করে পরিস্কার কেরে সেখানে ব্যবহার করুন দ্রুত ফল পাবেন আশা করি।
৯। হজমের সমস্যা নেই এমন কোন মানুষ নেই তাই
যাদের অতিরিক্ত গ্যাস বা এই জাতীয় যত সমস্যা আছে তারা অর্জুন গাছে ছালে বিশ্বাস
করে কিছু দিন নিয়মিত খেয়ে দেখতে পারেন। প্রতিদিন রাত্রে সামান্য কুসুম গরম পানিতে
মিশিয়ে নিয়মিত কিছুদিন ব্যবাহর করলে আপনার হজমশক্তি বাড়বে ইনশাঅল্লাহ।
১০। লিভার ভালো রাখা আমাদের শরীরের জন্য
খুবই দরকার। লিভার গোলযোগ দেখা দিলে আমাদের মানব দেহের অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে বা
বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই লিভার ভার রাখতে অর্জুন এর ব্যবহার
করুন।
১১। বিবাহিতদের ক্ষেত্রে যৌন উদ্দীপনার
অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। অনেক সময় বহু টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করতে হয়। কিন্তু
অনেকে জানে না অর্জুন গাছের ছালে এই সমস্যার সমাধান রয়েছে। ছাল গুড়া করে সামান্য
কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে নিয়মিত কিছু দিন খেলে যদি শুক্র কম থাকে তার বৃদ্ধি করে ও
দ্রুত যৌন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।
১২।
হার্নিয়া হলে টাটানি ব্যথা ও ফুলে রোগী অনেক কষ্ট পায়। তাই এই রোগে হার্নিয়াতে
অর্জুন ফল কোমরে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
১৩।
রক্তের চাপ নিম্ন হলে অর্জুন গাছের ছালের রস করে সেবন করলে ভাল কাজ করে। এমনকি
শরীরের যে কোন স্থানের রক্ত ক্ষরণ হলে তার অভাব পূরণ করতে সক্ষম।
১৪। বিভিন্ন গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছে
অর্জুন গাছের ছালে আছে গ্যালিক অ্যাসিড ও লুটেনোনিন। এই দুটি উপাদান এর দ্বারা
ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি কমায়। তাই যদি আপনি নিয়মিত এই ছাল ব্যবহার করেন তাহলে
ক্যানসার থেকে দূরে থাকতে পারবেন। সপ্তাহে ২ দিন শুধু ঘুমানোর আগে দুধের সাথে
অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো করে মিশিয়ে সেবন করুন। এতে উপকার পাবেন আশা করি।
১৫। মানুষের চলার পথে নানা ধরনের সমস্য হতে পারে বা দেখা
গেল সামান্যে আঘাতের ফলে হাড় মচকে বা চটে গেছে। তখন অর্জুন গাছের ছাল গুড়ো করে রসুন
এর সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন। তার সাথে গুড়া ছাল দুধের সাথে মিশিয়ে
খেতে থাকুন খুব দ্রুত কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।
১৬।
অর্জুন গাছর বাকল, লিপিড ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে রক্তে
কোলেস্টেরল হ্রাস করে। এই ছাল সেবন করলে রক্ত প্রবাহের বাধা দূর করে। অর্জুন গাছের
ছালের এক চামচ পাউডার, দুই গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় পান করা
উচিত।এটি ব্যবহারে বন্ধ ধমনী খুলে যাবে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে
সহযোগিতা করে।
১৭।
চুলের বৃদ্ধির ও সাদা চুল কালো করার জন্য আমরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে
পারি। অর্জুন গাছের ছাল ও মেহেদি মিশ্রণ করে চুলে লাগানোর ফলে পাকা সাদা চুল থেকে
কালো হয়। সেই সাথে চুল শক্তিশালী করে।
১৮।
যাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে গেছে তারা প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় অর্জুনের গাছের
ছালের মিশ্রণ পান করলে তাঁদের সমস্যা কমে যাবে। এটি ব্যবহারের এক মাসের মধ্যেই
আপনি আপনার মেদের উপর এর প্রভাব অনুভব করতে পারবেন।
১৯।
অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তৈরি পানীয় প্রস্রাবের বাধা বাধা দূর করে। এ জন্য অর্জুন
গাছের ছাল পিষ্ট করুন ও দুই কাপ পানিতে ফোটান যখন পানি অর্ধেক হয়ে আসবে তখন তা
ঠান্ডা করে নিন। তারপর ঠান্ডা হওয়ার পর রোগীকে সেবন করান। প্রতিদিন একবার করে খাওয়ান তাহলে প্রস্রাবের
বাধা বাধা দূর হবে।
অর্জুন গাছের অপকারিতাঃ
১। গর্ভবতী মহিলাদের
অর্জুন গাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ অর্জুন গাছের ব্যবহার এর ফলে গর্ভবতী
মহিলাদের অনেক ঝুঁকি বাড়ায় তাই গর্ভবতী মহিলাদের এই গাছের ছাল ব্যবহারে
সর্তকতা বজায় রাখতে হবে।
২। যাদের ডায়াবেটিকস এর
সমস্যা আছে তারা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
কারণ অর্জুন গাছ ব্যবহারে ডায়াবেটিকস রোগীদের সুগার আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভবর্তী
মহিলা ও ডায়াবেটিকস এর রোগীরা অর্জুন
গাছের ছাল বা যাই ব্যবহার করুন না কেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ করে নিবেন।
লেখাটি পাড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নিজে জানুন এবং অপরের কাছে লিঙ্ক শেয়ার করে অন্যদেরকে জানতে সাহায্য করুন।


