Brief biography of Hazrat Ali (RA): (হযরত আলী (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ)
.jpg)
Brief biography of Hazrat Ali (RA).
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রাঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
.jpg)
তিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর চাচাতো ভাই, জামাতা ও সাহাবী যিনি ৬৫৬ সন থেকে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খলিফা হিসেবে ইসলামি শাসন করেন। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ছিলেন চতুর্থ ইসলামের খলিফা। শিয়া ইসলাম অনুসারে তিনি ছিলেন প্রথম ইমাম । তার পিতার নাম ছিল আবু তালিব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ও মাতা ছিলেন ফাতিমা বিনতে আসাদের পুত্র। তার স্ত্রী ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর কন্যা ফাতিমা ও হাসান,হোসেন এর পিতা।
ছোট বেলায থেকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর যত্ন নিতেন। মুহাম্মদ (সঃ) তার নিকট আত্মীয়দের আমন্ত্রণের পরপর আলীর বয়স প্রায় ৯ থেকে ১১ বছর তখন ইসলাম ধর্মের প্রথম বিশ্বাসীদের একজন হন। তিনিই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী পুরুষ ও মুহাম্মদ (সঃ) এর সালাত আদায় করেন। মদিনায় থাকা কালীন তিনি বেশীরভাগ যুদ্ধে পতাকা বাহক ছিলেন ও সাহসিকতার সাথে বিখ্যাত হয়েছিলেন। প্রায় সকল যুদ্ধে তার অংশ গ্রহণ ছিল। বদরের যুদ্ধে বিশেষ বীরত্বের জন্য মুহাম্মদ (সঃ) তাকে জুলফিকার নামক তরবারী উপহার দিয়েছিলেন,খাইবারের সুরক্ষিত কামুচ দূর্গ জয় করলে মুহাম্মদ (সঃ) তাকে আসাদুল্লাহ বা “আল্লাহর সিংহ” নামে উপাধিতে ভুষিত করেন।
জন্ম ও বংশপরিচয়
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব মক্কায় কুরাইশ বংশে আনুমানিক
৬০১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। কুরাইশ বংশের দ্বায়িত্ব ছিল পবিত্র কাবার রক্ষণাবেক্ষণ
করা কুরাইশ বংশের একটি শাথা ছিল হাশেমি। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব এর পিতা মাতা
ছিলেন হাশেমি বংশের। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব পিতা আবু তালিব কাবা'র প্রহরী এবং
শক্তিশালী কুরাইশ গোত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে বনু হাশিমের শেখ ছিলেন৷
আলীর দাদা বনু হাশিম বংশের কিছু সদস্যসহ হানিফ ছিলেন এবং এক শ্বরবাদী বিশ্বাস
পদ্ধতির অনুসারী ছিলেন। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ইসলামের পবিত্র স্থান কাবার ভীতরে
জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়স থেকেই আলী মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে লালিত-পালিত হন।
ইসলাম গ্রহণ
মুহাম্মাদ (সঃ) যখন জানিয়েছিলেন তিনি ওহি পেয়েছিলেন, তখন হযরত আলী এর মাত্র ৯ বছর বয়স, তাকে বিশ্বাস করে ও ইসলামের প্রতি দাবী করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হযরত আলী ইসলামধর্ম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ। তিনি খাদিজার পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।" কা’বায় মুসলিম হিসেবে প্রথম সালাতে যে তিনজন ছিলেন তারা হলেন মুহাম্মাদ, খাদিজা ও আলী, কারন অন্য কেউ সেই সময় ইসলামধর্ম গ্রহণ করে নাই। ইসলাম ঘোষণা ৬১০ সাল থেকে ৬২২ সালে মুহাম্মদ (সঃ) এর হিজরতের সাথে মদীনায় এসে শেষ করেছিলেন।
ফাতিমা এর সাথে বিবাহ
মদিনায় হিজরতের ২য় বছরে মুহাম্মদ (সঃ) তার কন্যা ফাতিমার জন্য বহু বৈবাহিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমে তাকে আলীর সাথে বিবাহের সিদ্ধান্ত হয়। বদরের যুদ্ধের বেশ কিছুদিন আগে হযরত আলী (রাঃ) সাথে ফাতিমার সাথে বিবাহ হয়েছিল। তবে ৩ মাস পরে এই বিবাহ উদযাপন হয়েছিল। তখন হযরত আলী (রাঃ) এর বয়স ছিল ২৩ বছর ও ফাতিমার বয়স ছিল ১৮ বছর।
খিলাফত
হযরত ওসমান (রাঃ) শহীদ হওয়ার পরে অনেকে আলী (রাঃ) কে ওসমান (রাঃ) এর হত্যা করেছে বলে তাকে অভিযুক্ত করে। হযরত আলি (রাঃ) সরাসরি এ কথা অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে লোকেরা তাকে খলিফা হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয় কিন্তু হযরত আলি (রাঃ) অস্বকৃতি দিলেন। তারপরে জনগন তাকে জোর পূর্বক খলিফা নিযুক্ত করেন।রাশিদুন খিলাফতে চার রাশিদুন খলিফার অধীনস্থ এলাকাসমূহ। উক্ত বিভক্ত এলাকাগুলো খলিফা আলির খিলাফতকালীন সময়ের প্রথম ফিতনার সাথে সম্পর্কিত।তারপরেও হত্যার সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে হযরত আলি (রাঃ) কে এ বিষয়ে তর্ক বিতর্ক চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং আয়িশা ও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি জনগণের সাথে একত্রিত হন এবং বসরার ময়দানে হযরত আলি (রাঃ) বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজনে শরিক হয়। হযরত আলি (রাঃ) বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে তিনি পেছন থেকে নির্দেশনা এবং নেতৃত্ব দেন। ইসলামের ইতিহাসে এই যুদ্ধটি বসরার যুদ্ধ বা উটের যুদ্ধ নামে পরিচিত হয়েছিল। যুদ্ধে হযরত আলি (রাঃ) জয়ী হয়। হযরত আলী (রাঃ) ৬৫৬ সন থেকে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খলিফা হিসেবে ইসলামি শাসন করেন।
সামরিক কর্মজীবনী
তাবুকের যুদ্ধ ব্যতীত আলী প্রায সমস্ত যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং ইসলামের পক্ষে যুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) প্রথমে ৬২৪ সালে বদরের যুদ্ধে নিজেকে সাহসী যোদ্ধা হিসাবে প্রতিপন্ন করেছিলেন। মক্কার বীর যোদ্ধা ওয়ালিদ ইবনে উতবাকে পরাজিত করে তিনি যুদ্ধ শুরু করেছিল। হযরত আলী (রাঃ) উহুদ যুদ্ধের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক যুদ্ধেদের মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি জুলফিকার নামে পরিচিত দ্বিখণ্ডিত তরোয়াল চালিয়েছিলেন। উহুদ এর যুদ্ধের সময় মুসলিম বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তিনি নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন। এই যুদ্ধে কিংবদন্তি আরব যোদ্ধা আমর ইবনে আবদ-কে পরাজিত করেছিলেন। ইহুদীদের বিরুদ্ধে খাইবার যুদ্ধের সময় মুসলিমরা শক্তিশালী ইহুদি দুর্গটি দখলের চেষ্টা করেছিল। রাসূল (সঃ) ঘোষণা করেছিলেন তিনি সেই ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেবেন যিনি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসেন ও তারাও তাকে ভালবাসে। পরের দিন মুহাম্মদ (সাঃ) আলীর কঠিন লড়াইয়ের উপর বিশ্বাস রেখে তাকে দায়িত্ব দেন। ইহুদিরা শুধু তার ইসলামের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তাই নয় তারা তাদের প্রখ্যাত ও সাহসী যোদ্ধা মেহরাবকে সামনে পাঠিয়েছিল যারা আলীকে যুদ্ধার্থে আহ্বান করেছিল। আলীর অবিশ্বাস্য শক্তি প্রত্যক্ষ করেছিলেন যিনি তার তরোয়ারটির প্রবল আঘাতের দ্বারা মেহরাবকে হত্যা করেছিলেন। অতঃপর, মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে “আসাদুল্লাহ” বলে উপাধি দিয়েছিলেন এর অর্থ “আল্লাহর সিংহ”।
মুসলিমদের ওপর নীপিড়নকালে আলী (রাঃ) ভূমিকা
মক্কায় মুসলিমদের উপর অত্যাচার ও বনু হাশিম বর্জনের সময় হযরত আলী (রাঃ) মুহাম্মদ (সঃ) সমর্থনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) ইসলামের শত্রুদের অপব্যবহার থেকে মুহাম্মদ (সঃ)কে রক্ষা করেছেন। মুহাম্মদ (সঃ) যখন তায়েফে শহরের কাছে ইসলাম প্রচার করতে গিয়েছিলেন তখন তায়েফের বাচ্চারা তার দিকে পাথর নিক্ষেপ করেছিল তখন হযরত আলী (রাঃ) যিনি নবীকে রক্ষা করেছিলেন। যৌবনে হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন শক্তিশালী, তাজা বাহু, প্রশস্ত বুক এবং খুব শক্ত সাহসী এবং উজ্জল চেহারার অধিকারী। তার সম বয়সের বা তার চেয়েও বয়সে বড় শিশুরা তাকে দেখে ভয় পেত এবং যখনই কেহ নবীকে উপহাস করার চেষ্টা করত অন্য সকলেই পালিয়ে গেলেও নবীর সুরক্ষার জন্য হযরত আলী (রাঃ) দাঁড়িয়ে থাকতেন। যখন মুহাম্মদ (সঃ) ইসলামধর্ম প্রচার শুরু করলেন তখন হযরত আলী (রাঃ) অন্তর্ভুক্ত কিছু মানুষ ব্যতীত সবাই তার বিরোধীতা করতেন। হযরত আলী (রাঃ) মুহাম্মদ(সঃ) এর সকল প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে ঢাল হিসাবে ছিলেন।
মক্কা জীবন
আলীর (রাঃ) মা-বাবার সাথে মুহাম্মাদ(সাঃ) এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন পিতা মাতা মারা যাওয়া ও পরে তার দাদা আবদুল মুত্তালিবকে হারিয়ে ছিলেন, আলীর বাবা তখন তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। মুহাম্মাদ (সাঃ) খাদিজাকে বিয়ে করার দুই-তিন বছর পরে আলীর জন্ম হয়। যখন আলীর ৫ বছর বয়স মুহাম্মাদ (সঃ) আলীকে তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন। আলীর বাবা আর্থিক দিক থেকে ভাল ছিলেন, অপরিচিত মানুষদের খাবার দেওয়ার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন যদিও তারা ক্ষুধার্ত ছিল। আলী দত্তকের পরেই মুহাম্মাদ (সঃ) এর নিকট থাকতেন। মুহাম্মাদ (সঃ) যেখানে যেতেন আলী সারাক্ষণ তার সাথে যেতেন। এমনকি হেরা গুহায় যখন তিনি ধ্যানের জন্য যেতেন আলী বেশিরভাগ সময় তার সাথে যেতেন। কখনও কখনও সেখানে তারা ৩ থেকে ৪ দিন পাহাড়ে অবস্থান করতেন। মাঝে মাঝে আলী তার খাবার নিয়ে যেতেন।
মদীনায় হিযরত
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশে নবী মুহাম্মদ (সঃ) আবু বকরের
সাথে মক্কা ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এবং রাতে, মুহাম্মদ (সঃ) আলীকে সকল
সম্পত্তি তাদের মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে বললেন। মুহাম্মত (সঃ) আলীকে তার
বিছানায় শুতে বললেন এবং তিনি আনন্দের সাথে আদেশটি পালন করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে
বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আলী ছদ্মবেশ ধারণের জন্য মুহাম্মদ (সঃ) বিছানায় ঘুমিয়ে
নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন যার ফলে একটি হত্যার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ও
মুহাম্মদ (সঃ) হিজরত নিশ্চিত হয়। মুহাম্মদ (সঃ) খেদমত করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন
কারণ তিনি পরের দিন যারা ছিলেন তাদের মুহাম্মদ (সঃ) এর সকল গচ্ছিত সম্পত্তি
সফলভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি পরিবারের বাকি সব সদস্যদের সাথে নিয়ে
মক্কার মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে তার মা ফাতেমা বিনতে
আসাদ, তার খালা, হামজার স্ত্রী এবং মুহাম্মদ (সঃ) এর কন্যা ফাতেমা এবং আরও অনেক
মহিলারা ছিলেন। মক্কায় কাফেররা হযরত আলী (রাঃ) কে থামানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু
আলী লড়াই করে কাফেরদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং তারা নিরাপদে মদীনায় পৌঁছেছিলেন।
হযরত আলী (রাঃ) যখন মদিনায় হিজরত করেছিলেন তখন তার বয়স ছিল ২২ বা ২৩ বছর।
![]() |
| Tomb of Hazrat Ali images |
আলী ইবনে আবি তালিবের সমাধি
৪০ হিযরীর ১৯ শে রমযান বা ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে জানুয়ারি
মসজিদে কুফায় সালাত আদায় করার সময় তিনি খারেজি আব্দুর রহমান ইবনে মূলযাম এর
দ্বারা হামলার শিকার হন। তিনি সালাতে
সেজদা দেওয়ার সময় ইবনে মুলজামের বিষ-মাখানো তরবারী দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। হযরত আলি (রাঃ) তার পুত্রকে নির্দেশ দেন কেউ যেন তাদের আক্রমণ না করে
তার বদলে তিনি নির্দেশ দেন। যদি তিনি বেঁচে যান তবে যেন ইবনে মুলজামকে ক্ষমা করে
দেয়া হয়। আর যদি তিনি মারা যান তবে ইবনে মুলজামকে যেন ঠিক নিজ আঘাতের সমতুল্য
একটি আঘাত করা হয়। হযরত আলী (রাঃ) হামলার দুই দিন পর ২৯ শে জানুয়ারি ৬৬১
খ্রিষ্টাব্দে ২১ শে রমযান ৪০ হিজরী ইন্তেকাল করেন। পুত্র হাসান তার নির্দেশ
অনুযায়ী কিসাস পূর্ণ করেন ও আলীর মৃত্যুর পর ইবনে মুলযামকে সমপরিমাণ শাস্তি
প্রদান করা হয়।
লেখাটি পাড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নিজে জানুন এবং অপরের কাছে লিঙ্ক শেয়ার করে জানার জন্য সহযোগিতা করুন।
